ফাস্টনিউজ, ঢাকা: সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি এক পরিবারের মা ও দুই ছেলে নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে ওমরাহ হজ পালন করে পবিত্র নগরী মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পথে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, তানিয়া হোসেন (৩৫) তার দুই ছেলে ইউসা হোসেন (৭) এবং আযান হোসেন (৩)। দুর্ঘটনায় নিহতের সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই তানিয়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
বিয়ের আগ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া মহল্লার ‘ইন্দ্রপুরী’ নামের বাড়িটিতেই থাকতেন তানিয়া। বাড়ির ছোট মেয়ে তানিয়া একসময় যে ইন্দ্রপুরী সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখতেন, সেই তানিয়ার শোকেই আজ কাতর হয়ে পড়েছে ইন্দ্রপুরীর সবাই। মা ও দুই ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই।
স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ইতালিতে বসবাসকারী তানিয়া আগামীকাল (৩১ ডিসেম্বর) দেশে ফিরবেন বলে বাড়ির সবাইকে কথা দিয়েছিলেন। তবে সে কথা রাখতে পারলেন না তানিয়া। সবাইকে কাঁদিয়ে ছোট্ট দুই সন্তানকে নিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।

তানিয়ার স্বজনরা জানান, গত ১০ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া গ্রামের ইলিয়াস মাস্টারের ছেলে নিলয় হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তানিয়ার। বিয়ের পরপরই তানিয়াকে নিয়ে ইতালিতে পাড়ি জমান নিলয়। সেখানেই একটি শিপইয়ার্ডে ঠিকাদারের কাজ করতেন তিনি। গত ২৭ ডিসেম্বর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওমরাহ্ হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যান নিলয়। হজ পালন শেষে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পথে তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি খাদে পড়ে যায়।
এ ঘটনায় তানিয়া ও তার দুই ছেলে ইউসা এবং আযান মারা যান। তানিয়ার স্বামী নিলয় সেখানকার একটি হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানিয়ার বড় ভাই মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার আগে তানিয়া বাড়িতে ফোন করেছিল। মাকে ও-বলেছিল ওর ভালো লাগছে না, বোধহয় বেশি দিন বাঁচবে না। সবাই যেন ওকে ক্ষমা করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, তানিয়া আমাদের সবার ছোট ছিল। ও আমাদের সবার খুব আদরের। আমরা ওকে আদর করে মেওয়া বলে ডাকতাম, কারণ সবুরে মেওয়া ফলে। তানিয়া ও তার দুই ছেলের মরদেহ যেন পবিত্র নগরীতেই দাফন করা হয় সেজন্য সৌদি আরব সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন মাহবুবুর রহমান।
৩০.১২.২০১৭/ফাস্টনিউজ/এআর/১৪.৪০