ফাস্টনিউজ, ঢাকা:ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতায় যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ নয় দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণসমাবেশ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে এই গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজউল্লাহর সঞ্চালনায় সমাবেশের শুরুতেই চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিবেশনায় ধর্ষণবিরেধী গান ও কবিতা পরিবেশন করা হয়। এরপর সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, কেন্দ্রীয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবির সাধারণ সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী ও প্রীতিলতা ব্রিগেডের নারী নেত্রী আসমানর আশাসহ ছাত্র-যুব-নারী সংগঠনের নেতারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ তাদের অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতায় যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; আদিবাসী নারীদের ওপর সব প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর করা। সিডো সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলোপ করা; ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারাকে বিলোপ এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করা; অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করা; তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন বন্ধ এবং ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারী বিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করা। পর্নোগ্রাফি বন্ধে বিটিআরসির কার্যকর ভূমিকা পালন করা; মাদক ব্যবসার হোতাদের গ্রেফতার এবং মাদকাসক্তি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছদ, ছবি, নির্দেশনা, শব্দ চয়ন পরিহার করা এবং গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করাও দাবি তাদের।
সমাবেশে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ধর্ষণ আলাদা একটি বিষয় নয়। ধর্ষণ একটি যৌন সন্ত্রাস। যারা ধর্ষণের অপরাধে অপরাধী তারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাবান। আর সেই ক্ষমতার জোরে তারা জমি দখলসহ চাঁদাবাজি এবং যৌন নিপীড়ন ঘটায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের একটি পরিসংখ্যান পাই। আমাদের মনে রাখতে হবে এই পরিসংখ্যান বাস্তব যে চিত্র তার খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ। আজকের নিরাপত্তার জন্য অনেকে হিজাব পরছেন, বোরকা পরছেন। তারা ভাবছেন এটি পরলে আমরা নিরাপদ থাকতে পারব। কিন্তু দেখা যাচ্ছে হিজাব পরেও নিরাপত্তা আনা যাচ্ছে না। আজকে ঘরের মধ্যেও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ধর্ষণের জন্য ঘর বাহির বা পোশাক আসল কারণ নয়; আসল কারণ হচ্ছে ধর্ষকদের ক্ষমতা।
১২.০২.২০২১/ফাস্টনিউজ/এমআর/২১.২৫